হবিগঞ্জ, ১৮ নভেম্বর : হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা গ্রামে মাদক ব্যবসায়ীর অনুদানের টাকা গ্রহণ না করায় এবং খাস জমি দখলে বাধা দেয়ায় মসজিদের সেক্রেটারীকে অপহরণ করে মাদক মামলায় ফাসিয়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রভাবশালী মাদক সিন্ডিকেটের এই অপকর্মের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করতে গিয়ে নিগৃহীত হয়েছে ওই পরিবার। সোমবার দুপুরে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে পানিউমদা হরতকী পাড়া জামে মসজিদের সাধারন সম্পাদক কাজল মিয়ার স্ত্রী তাছলিমা খানম এই অভিযোগ করেন। দুই সপ্তাহের শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে বক্তব্য উপস্থাপনকালে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে তাছলিমা খানম বলেন, তার স্বামী কাজল মিয়া একজন কৃষক ও নিরীহ মানুষ। শান্তিপ্রিয় মানুষ হিসাবে এলাকায় সুনামের সহিত নির্বিবাদে বসবাস করিয়া আসছেন। একজন স্বচ্ছ ও ভাল মানুষ হিসাবে এলাকাবাসী তাকে স্থানীয় হরতকি পাড়া জামে মসজিদের সাধারণ সম্পদক হিসাবে দায়িত্ব প্রদান করেন। ১০ বছর যাবত তিনি সততার সাথে এই দায়িত্ব পালন করে আসছেন। কিন্তু পানিউমদা গ্রামের পাহাড়ি এলাকা হরতকি পাড়ায় মৃত ইসমাইল মিয়ার ছেলে উসমান গণি ও তার ছেলে মিজানুর মিয়া, শাহিনুর মিয়া, মহিবুর মিয়া , সুহিনুর মিয়া ও আম্বর আলী মিলে মাদক ব্যবসার সিন্ডিকেট গড়িয়া তোলে । তাদের এই অপকর্মের কথা প্রশাসন জানলেও কোন প্রতিকার না নেওয়ায় তাদের সিন্ডিকেট বৃহত্তর সিলেট জুড়ে বিস্তৃত হয়। এই সিন্ডিকেট তাদের অপকর্ম ডাকতে হরতকি পাড়া জামে মসজিদে অনুদান দিতে চাইলে কাজল মিয়া অবৈধ টাকা মসজিদে নেওয়া যাবে না জানালে উসমান গণি তার প্রতি ক্ষিপ্ত হইয়া উঠে। এছাড়াও এলাকার খাস জমি উসমান গণি গং আত্মসাৎ করার চেষ্টা করলে কাজল মিয়া তার বিরোধীতা করেন। এজন্য উসমান গণি গং তাকে হত্যা, অপহরণসহ সহ মিথ্যা মামলায় ফাসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এমনকি ২০ অক্টোবর উসমান গণি গং স্থানীয় বিরোধ নিয়ে কাজল মিয়াকে মারপিট করে গুরুতর জখম করে। এ ব্যাপারে কাজল মিয়া ও তার ভাই কামাল মিয়া বাদী হয়ে দুটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের খবর জানতে পেরে উসমান গণি গং এলকায় প্রচার করে ‘প্রশাসন তাদের পকেটে আছে। জীবনের মত আমার স্বামীকে শিক্ষা দিয়া ছাড়িবে’। তিনি আরও বলেন, উসমান গণি গং এর হুমকি ধামকির পরও জীবন ও জীবিকার স্বার্থে কাজল মিয়া গত ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় মৌলভীবাজারের শমসেরগঞ্জ বাজার থেকে গরু বিক্রি করে পানিউমদা গ্রামের ফারুক মিয়ার ছেলে আমির হুসেনের সিএনজিতে করে বাড়ীতে আসার জন্য রওয়ানা হন। পথিমধ্যে কদমতলা নামক স্থানে উসমান গণির ছেলে মিজানুর রহমান, মুহিবুর রহমান ও শাহিনুর রহমানসহ অজ্ঞাত ২/৩জন লোক সিএনজি আটকিয়ে কাজল মিয়াকে টেনে হিচড়ে নামিয়ে মারপিট করে চোখ বেধে জোর পূর্বক একটি হাইয়েস গাড়ীতে তুলে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
মৌলভীবাজার সদর থানা, মৌলভীবাজার ডিবি অফিস, শ্রীমঙ্গল থানা, র্যাব অফিস ও নবীগঞ্জ থানায় খোজ খবর না পেয়ে নবীগঞ্জ থানায় জিডি করতে গেলে সেখানকার দায়িত্বশীলরা টালবাহনা করে জিডি রেকর্ড করেনি। এমনকি জিডি করতে যাওয়া লোকজনের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করেন। পরে তারা জানতে পারেন মাদক সম্রাট উসমান গণি গংরা কাজল মিয়াকে অপহরণ করে মারপিট করে গুরুতর জখম করে সিলেটের জকিগঞ্জ থানায় নিয়ে যায়। জকিগঞ্জের পশ্চিম দেওর গ্রামে নিয়ে কাজল মিয়ার চোখ বেধে তার পকেটে ২ হাজার ৩৫০পিস ইয়াবা ট্যাবলেট রেখে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। পরে জকিগঞ্জ থানার এস.আই জাকির আহমেদ ওরফে লিমন বাদী হয়ে জকিগঞ্জ থানায় কাজল মিয়ার নামে মাদক আইনে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।
তাছলিমা খানম বলেন, আমার স্বামী একজন সৎ মানুষ। কোন মামলা মোকদ্দমা আমার স্বামীর বিরুদ্ধে নেই। মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না। আমার স্বামী মাদক সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন। মাদক ব্যবসায়ীর অনুদান মসজিদের জন্য গ্রহণ না করায় এবং ন্যায়ের পক্ষে থাকায় আমার স্বামীকে নাটক সাজিয়ে ফাসানো হয়েছে। পানিউমদা গ্রামের প্রতিটি মানুষ আমার স্বামীর নীতি ও সততার পক্ষে স্বাক্ষী দিবে। উসমান গণি গং এর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ প্রতিবাদ করতে না পারলেও এলাকায় খবর নিলে তাদের অপকর্মের সত্যতা বেড়িয়ে আসবে। আমার স্বামীর মত নিরীহ লোকজন যাতে মাদক সন্ত্রাসের শিকার না হয় তাহার জন্য সরকারের কাছে দাবী জানান তিনি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan